ঢাকা , রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ , ৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

আগুন নেভাতে গিয়ে বিচারপতির বাড়িতে বিপুল অর্থের খোঁজ

আপলোড সময় : ২২-০৩-২০২৫ ০২:৫৩:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২২-০৩-২০২৫ ০২:৫৩:১৩ পূর্বাহ্ন
আগুন নেভাতে গিয়ে বিচারপতির বাড়িতে বিপুল অর্থের খোঁজ
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে হাই কোর্টের এক বিচারপতির সরকারি বাসভবনে আগুন লাগতেই হল পর্দাফাঁস। আগুন নেভাতে গিয়ে দমকলকর্মীরা খুঁজে পেলেন কাঁড়ি কাঁড়ি নগদ অর্থ।

এ ঘটনা সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে বিচারপতিকে। হতে হয়েছে বদলি।

হাই কোর্টের এই বিচারপতির নাম যশবন্ত ভার্মা। তার দিল্লির বাংলোয় গত সপ্তাহে আগুন লাগে। সে সময় বিচারপতি ভার্মা বাংলোয় ছিলেন না। তিনি ছুটি নিয়ে প্রয়াগরাজে নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরিবারের লোকেরা দমকল এবং পুলিশকে খবর দেয়।

দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভেতরে ঢুকেছিল কোথাও আগুন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে। তখনই বাংলোর কয়েকটি ঘরে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের খোঁজ মেলে।

এই নগদ অর্থের কোনও হিসাব দিতে পারেননি বিচারপতি বা তার পরিবারের সদস্যরা। এত বেশি পরিমাণ হিসাব বহির্ভূত নগদ অর্থের হদিস এক হাইকোর্টের বিচারপতির বাড়িতে মেলার পর স্থানীয় পুলিশ খবর দেয় তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে।

তাদের মাধ্যমে সেই খবর পৌঁছায় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার কাছে।

এরপরই খান্নার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ৫ সদস্যের কলেজিয়াম সিদ্ধান্ত নেয় বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদে বদলি করার।

কলেজিয়াম হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ, বদলি এবং চাকরি জীবনের সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

২০২১ সালে এলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে দিল্লি হাই কোর্টে বদলি হয়ে এসেছিলেন বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা। সেই এলাহাবাদেই আবার তাকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম।

‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানায়, বিচারপতির ভার্মার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তাকে অভিশংসন করা হবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের সদস্য অনেক বিচারপতিই মনে করছেন, এ ধরনের গুরুতর অপরাধে বদলির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত লঘু শাস্তি। এতে বিচারব্যবস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।

বিচারপতি ভার্মার উচিত স্বেচ্ছায় অবিলম্বে পদত্যাগ করা। তিনি পদত্যাগ করতে না চাইলে পার্লামেন্টে তাকে অভিশংসন করার জন্য আবেদন করা হতে পারে।

নিয়ম কি বলছে?

কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অন্যায় কাজ করা, বিচারবিভাগীয় অনিয়মের অভিযোগ উঠলে কীভাবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছিল।

তাতে বলা হয়েছে, কোনও বিচারক বা বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পেলে প্রধান বিচারপতি অভিযুক্তের কাছ থেকে জবাব চাইবেন। যদি তার জবাবে তিনি সন্তুষ্ট না হন, অথবা তার মনে হয় বিষয়টি তদন্ত করা দরকার, তাহলে তিনি অভ্যন্তরীন কমিটি গঠন করবেন।

সেই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের একজন ও হাই কোর্টের দুইজন বিচারপতি থাকবেন। তদন্তের পর কমিটি যদি মনে করে, যে অভিযোগ করা হয়েছে তা গুরুতর এবং তাকে অপসারণ করা দরকার, তাহলে তারা প্রধান বিচারপতিকে সেই তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন।

তখন প্রধান বিচারপতি তাকে পদত্যাগ করতে বলবেন। তিনি পদত্যাগ না করলে প্রধান বিচারপতি সরকারকে জানাবেন, পার্লামেন্ট তাকে অভিশংসন করতে পারে।

দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ উদ্ধারের ঘটনায় নিয়ম মেনে তার কাছ থেকে আগে জবাব চাইবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।

কে এই বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা?

বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার জন্ম ১৯৬৯ সালের ৬ জানুয়ারি এলাহাবাদে। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হংসরাজ কলেজ থেকে বিকম (অনার্স) করেন এবং পরে মধ্যপ্রদেশের রেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন।

১৯৯২ সালের অগাস্টে তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৪ সালে তিনি এলাহাবাদ হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালে স্থায়ী বিচারপতি পদে উন্নীত হন।

আর ২০২১ সালের অক্টোবরে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন যশবন্ত ভার্মা। ওই সময়ই তাকে দিল্লি হাই কোর্টে বদলি করা হয়েছিল।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ